শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করলেন নগরীর হাসপাতাল রোডের শ্রী শ্রী দুর্গামাতা ঠাকুরানী মন্দিরের সেবায়েত। দুই সহোদর সেবায়েত মিলে গোপনে চড়া মূল্যে বিক্রি করে দিয়েছে শতবর্ষী ওই মন্দিরের জমি। জাল জালিয়াতির মাধ্যমে মন্দিরের দেবত্ত সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখে নিয়ে তা বিক্রি করে ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে সেবায়েত ডা. হিমাংশু বিশ্বাস বাবুল ও বিমল শংকর বিশ্বাস। নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে বিক্রি করা শতবর্ষী মন্দিরের ওই জমি পৈত্রিক সম্পত্তি বলে দাবী করেছেন অভিযুক্তরা।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, নগরীর সদর (জেনারেল) হাসপাতালের সামনেই অবস্থিত শ্রী শ্রী দুর্গামাতা ঠাকুরানী মন্দির। শত বছরের এই মন্দিরটিতে প্রতি বছরই পারিবারিকভাবে দুর্গা পুজা হয়ে আসছিলো। সর্বশেষ গেলো বছরও মন্দিরটিতে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই মন্দিরের জমি বিক্রি করে দিয়েছি সেখানকার সেবায়েত ডা. হিমাংশু বিশ্বাস বাবুল। গত তিন দিন পূর্বে মহিউদ্দিন নামের এক প্রবাসীর কাছে ২ কোটি ৩২ লাখ টাকায় মন্দির সহ মোট ১০ শতাংশ জমি বিক্রি করা হয়েছে। এমনকি জমির মালিকানা বুঝে পেয়ে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দেন মালিক পক্ষ। সেই সাথে বন্ধ হয়ে যায় মন্দিরের কার্যক্রমও। জমি বিক্রি করে দিয়ে আত্মগোপনে চলে যান মন্দিরের সেবায়েত ডা. হিমাংশু বিশ্বাস বাবুল। তবে বুধবার সন্ধ্যার পরে চেম্বারে তার দেখা মেলে।
মন্দিরের জমি বিক্রি’র বিষয়ে সেবায়েত হিমাংশু বিশ্বাস বাবুল বলেন, ওই স্থানে মোট ১০ শতাংশ জমি রয়েছে। ওই মন্দিরের পাশেই আমাদের নিজস্ব বাড়ি। আমাদের পূর্ব পুরুষা মন্দিরের ওই জমির মালিক ছিলেন। সর্বশেষ আমার বাবার কাছ থেকে মা বাসন্তি রানী বিশ্বাস জমির মালিক হন। তিনি ওই জমি আমাদের দিয়েছেন।
সেবায়েত মিহাংশু বিশ্বাস বাবুল এটি তাদের পারিবারিক দুর্গা মন্দির ছিলো দাবী করে বলেন, মোট জমির মধ্যে থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ বিক্রি করা হয়েছে। এছাড়া আড়াই শতাংশ জমি রাখা হয়েছে মন্দির আর একটি ফার্মেসীর জন্য। এটি কোন দেবত্ত সম্পত্তি নয় যে বিক্রি করতে বাঁধা থাকবে। পূর্ব পুরুষ থেকেই ওই জমি আমাদের। তাই প্রয়োজনের তাগীদে বিক্রি করেছি।
তবে তার এই বক্তব্যের বিরোধীতা করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা। তারা বলেন, শতবর্ষী এই মন্দিরটির মুল মালিক ছিলেন দুর্গা রানী। যিনি মন্দিরের জন্যই জমিটি দান করেন। সর্বশেষ আরএস খতিয়ান অনুযায়ী ওই জমির সেবায়েত এর দায়িত্ব পান ডা. হিমশংকর বিশ্বাস বাবুল ও তার ভাই বিমল শংকর বিশ্বাস। তারা সু-কৌশলে ওই জমি তাদের মা বাসন্তি রানী বিশ্বাসের নামে লিখিয়ে নিয়েছেন। সর্বশেষ মন্দিরের কার্যক্রম বন্ধ করে ওই জমিটি বিক্রি করে কোটিপতি হয়েছেন দুই সহোদর সেবায়েত।
তারা আরো অভিযোগ করেন, হাসপাতাল রোডের শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দিরের পেছনের অংশে দুই সেবায়েত বসবাস করেন। সেবায়েত হওয়ায় তাদের ওই জমিতে থাকতে দেয়া হয়েছে। কিন্তু যে জমিতে তারা বসবাস করে সেই জমিও তাদের নয়। পুরো জমিই মন্দিরের দেবত্ত জমি বলে দাবী করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ।
তারা বলেন, শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দিরটি পারিবারিক হলেও সরকারের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। তাছাড়া বরিশালে যত মন্দির রয়েছে তার সবই কারোনা কারোর জমিতে নির্মিত। ধর্মীও উপাসনায় নির্মান হওয়া জমি দেবত্ত সম্পত্তিতে পরিনত হয়। যে কারনে আইনত ভাবে ওই জমি বিক্রির কোন সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই অবৈধ ভাবে মন্দিরের জমি বিক্রির ঘটনায় আইনের আশ্রয় নেয়ার কথাও ভাবছেন হিন্দু নেতৃবৃন্দ।
Leave a Reply